শিরোনাম
Passenger Voice | ১১:৩৮ এএম, ২০২২-০৬-২৩
২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। সেতু এলাকায় প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে প্রকল্পের শুরু থেকেই উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষে্য পদ্মা সেতু জাদুঘর গড়ে তোলা হচ্ছে। এর সঙ্গে শুরু থেকে জড়িত রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মো. আনোয়ারুল ইসলাম। এ নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। পদ্মা সেতু জাদুঘর নির্মাণ পরিকল্পনার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করা এবং প্রাণী ও জীববৈচিত্র্যের নমুনা সংগ্রহের কৌশল নিয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক মো. আনোয়ারুল ইসলাম। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইফতেখার মাহমুদ।
বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের আগে যমুনা নদী ও তীরবর্তী এলাকার বন্য প্রাণী নিয়ে জরিপ করা হয়। অধ্যাপক জাকির হোসেনের সঙ্গে ওই জরিপে আমিও যুক্ত ছিলাম। জরিপের ফলাফল তুলে ধরার সময় একটি জাদুঘর করার পরিকল্পনা হয়। সেটি বেশ সাফল্যের সঙ্গে বাস্তবায়িত হয়েছে। মানুষ আগ্রহ নিয়ে ওই জাদুঘরে যায়। এভাবে পদ্মা সেতু প্রকল্পে শুরু থেকে প্রাণী জরিপ ও জাদুঘর যুক্ত করা হয়। ২০১৪ সালে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান থাকাকালে জাদুঘরের বিষয়ে সেতু কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়। পদ্মা সেতু এলাকার প্রাণী ও জীববৈচিত্র্যের নমুনা সংগ্রহ করে তা সংরক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয় আমাদের। জাদুঘরের ভবন ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মিত হলে সেখানে নমুনা রাখা হবে।
পদ্মা সেতু জাদুঘরে কী কী থাকছে?
আনোয়ারুল ইসলাম: বঙ্গবন্ধু সেতু প্রাণী জাদুঘরের তুলনায় পদ্মা সেতু জাদুঘর বড় পরিসরে হচ্ছে। কেবল পদ্মা সেতু এলাকার প্রাণী ও জীববৈচিত্র্যের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে না, দেশের অন্যান্য অঞ্চলে কোনো প্রাণীর নমুনা পাওয়া গেলে তা–ও সংগ্রহ করা হচ্ছে। আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অন্তর্নিহিত ইচ্ছা হচ্ছে, এটি দেশের সবচেয়ে বড় ও কেন্দ্রীয় প্রাণী জাদুঘর হোক।
প্রাণীর নমুনা সংগ্রহ ও সংরক্ষণে আপনারা কী পদ্ধতি ব্যবহার করছেন?
দেশের বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে কোনো জীবন্ত প্রাণী আটকে রাখা দণ্ডনীয় অপরাধ। এ কারণে ওই এলাকায় মৃত প্রাণী পাওয়া গেলে আমরা সংগ্রহ করে রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে বিশেষভাবে সংরক্ষণ করছি। সেগুলোর প্রজাতি, বসবাসের এলাকাসহ অন্যান্য তথ্য লিখে রাখছি। আমাদের দেশের আবহাওয়ায় প্রাণীদের মৃতদেহ সংরক্ষণ বেশ জটিল। বছরের বেশির ভাগ সময় আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা বেশি থাকে। ফলে আমরা মৃত প্রাণীগুলোকে অবিকৃত রাখতে বিশেষ কৌশল নিচ্ছি। তবে এগুলো দীর্ঘ মেয়াদে সংরক্ষণ করতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। সেই দায়িত্ব সেতু কর্তৃপক্ষের।
জাদুঘরটিতে কী কী প্রাণী থাকছে?
এ পর্যন্ত আমরা ২ হাজার ৩৬৫টি প্রাণীর নমুনা সংরক্ষণ করেছি। এগুলো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পদ্মা সেতু প্রকল্পের একটি স্থানে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৪০০ প্রজাতির প্রাণী আছে। এর অর্ধেকের বেশি পদ্মা নদী অববাহিকার। বাকিগুলো দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে সংগ্রহ করা। তাই প্রাণীগুলোকে আলাদাভাবে রাখছি। প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাছের প্রজাতি—৩২৮টি। এ ছাড়া পাখির প্রজাতি ১৭৭টি ও স্তন্যপায়ী প্রাণী ৩৫টি। বাংলাদেশের বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী ঘড়িয়াল, মিঠাপানির ডলফিন, গন্ধগোকুলসহ নানা প্রজাতির প্রাণী জাদুঘরে থাকবে।
জীবন্ত প্রাণীর জন্য পদ্মা সেতু প্রকল্পের মধ্যে বন্য প্রাণী অভয়াশ্রম করা হচ্ছে। সেখানে ইলিশ ও কচ্ছপের প্রজনন এবং পাখির বিচরণ এলাকা থাকছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, দেশের কোথাও বড় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হলে আশপাশে সরকারি–বেসরকারি নানা অবকাঠামো গড়ে ওঠে। এর প্রভাব পড়ে সেখানকার জীববৈচিত্র্যের ওপর। কারণ, পৃথিবীজুড়ে উন্নয়ন ও সংরক্ষণ একসঙ্গে হাত ধরাধরি করে এগোয় না। পদ্মা সেতু এলাকাও এর ব্যতিক্রম নয়। এ কারণে শুরু থেকে সেখানে থাকা নানা ধরনের প্রাণীকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জীবন্ত প্রাণীদের জন্য সেখানে আরও সংরক্ষিত এলাকা করা যেতে পারে। সেখানে কী ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হবে, ভূমির ব্যবহারে কী ধরনের পরিবর্তন হতে পারে—এসব বিষয় এখন থেকেই অনুধাবন করতে হবে। সে অনুযায়ী প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যকে সংরক্ষণের পরিকল্পনা এবং উদ্যোগ নিতে হবে। পদ্মা সেতু করে আমরা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছি, আমরা এত বড় অবকাঠামো নিজেদের উদ্যোগে করতে পারি। একইভাবে পদ্মা সেতু এলাকার জাদুঘরকে সত্যিকারের প্রাকৃতিক ইতিহাস জাদুঘরে রূপ দিয়ে আমরা বিশ্ববাসীর সামনে আরেকটি উদাহরণ তৈরি করতে পারি।
সূত্র: প্রথম আলো
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2019 - 2024 PassengerVoice | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Developed By Muktodhara Technology Limited.